গর্ভকালীন খাবার এবং গর্ভাবস্থায় মায়ের জরুরি সাবধানতা

0 35

একটি মেয়ে মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণের মাধ্যমেই পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। মাতৃত্বের এই স্বাদই তাকে সম্পূর্ণ করে। আর এই মাতৃত্বের প্রথম ধাপই হচ্ছে গর্ভাবস্থা। তাই নারীর নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে প্রয়োজন গর্ভকালীন সঠিক পরিচর্যা, চিকিৎসা, সুস্থতা এবং সতর্কতা। আর গর্ভকালীন সময়ের সঠিক পদক্ষেপই নিশ্চিত করতে পারে গর্ভের সন্তানের সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশ।

গর্ভকালীন খাবার

গর্ভকালীন সময়ে নারীর মধ্যে বিকশিত হতে থাকে নতুন এক প্রাণ, নতুন এক সত্তা। এসময় তাই স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি খাবার খাওয়া উচিত। অল্প অল্প করে কিছুক্ষণ পর পরই খাওয়া উচিত। কোনোভাবেই না খেয়ে থাকা বা কোনো বেলার খাবার এসময় ত্যাগ করা উচিত নয়।এসময় যেসব খাবারের দিকে বিশেষ নজর দেয়া উচিত –

সুষম খাবার
সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের এসময় কোনো বিকল্প নেই। সুষম খাবার অর্থাৎ সবধরনের খাবারই এসময় খাদ্যতালিকায় অল্প করে রাখতে হবে।
অনেকের এসময় কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে বেশি বেশি আঁশযুক্ত খাবার, যেমন- সবুজ শাকসবজি, পুঁইশাক, লালশাক, মিষ্টিকুমড়া, ঢেঁড়স এগুলো বেশি বেশি খেতে হবে।
প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য প্রতিদিন ছোট, বড় মাছ, মাংস, ডিম, ডাল এগুলো পরিমিতভাবে নিয়মিত খেতে হবে।
এছাড়া প্রয়োজনীয় ভিটামিনের ঘাটতি পূরণের জন্য হলুদ ফলমূল, মৌসুমি ফল খেতে তাদেরকে উৎসাহিত করতে হবে।
এসময় অরুচি বা বুক জ্বালাপোড়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।তাই সহজপাচ্য খাবার গ্রহণই তাদের জন্য শ্রেয়।

মিনারেল
গর্ভবতী মায়েদের প্রচুর নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। কিছু সময় পর পরই এ পানি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। এ অভ্যাস গর্ভের শিশুর সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে সহায়ক।

আয়োডিন
গর্ভকালীন প্রথম ১২ সপ্তাহে শিশুর মস্তিষ্ক গঠিত হয়। আর শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে আয়োডিনের প্রয়োজন অপরিসীম। এজন্য আয়োডিন-যুক্ত লবণ, সামুদ্রিক মাছ, ডিম, মাংসের কলিজা এগুলো পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। তবু কোনো কোনো ক্ষেত্রে মায়েদের আয়োডিন স্বল্পতা দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে।ক্যালসিয়াম
এসময় অনেকেরই শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়। তাই ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।দুধ এবং দুধের তৈরি খাবার প্রতিদিনই এজন্য খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। তবে এক্ষেত্রে অ-পাস্তুরিত ও কাঁচা দুধ পরিহার করাই শ্রেয়।ফলিক এসিড
শিশুর মস্তিষ্কের কোষ গঠনে অত্যধিক সহায়ক হিসেবে এই ফলিক এসিড পরিচিত। তাই ফলিক এসিড-যুক্ত খাবার গ্রহণের প্রতি গর্ভবতীদের উৎসাহিত করতে হবে।পালংশাক, কলমিশাক, মসুর ডাল এসব প্রতিদিনই খাদ্যতালিকায় রাখার চেষ্টা করতে হবে।

গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মায়েরা গর্ভাবস্থার ৪ মাস পূর্ব থেকে গর্ভকালীন ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত ফলিক এসিড সাপ্লিমেন্ট হিসেবে নিয়েছেন তাদের সন্তানদের অটিজমের ঝুঁকি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়। তবে এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

সতর্কতা
গর্ভকালীন সময়ে অনেক বেশি সচেতনতা এবং সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন। বিশেষ করে গর্ভকালীন প্রথম ৩ মাস এবং শেষ ৩ মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসময় প্রতিটি পদক্ষেপ অনেক সুচিন্তিত ভাবে নিতে হবে। এসময় সবধরনের খাবারই গ্রহণ করা গেলেও কিছু খাবার পরিহার করা উচিত। কাঁচা বা আধা সিদ্ধ খাবার একদমই গ্রহণ করা উচিত নয়।তাছাড়া কাঁচা বা আধা পাকা পেঁপে, আনারস,সজিনা এসব খাবার একদমই ধরা উচিত নয়।

বাইরের জাঙ্ক ফুড অর্থাৎ ফাস্টফুড জাতীয় খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করতে হবে।গর্ভাবস্থায় ক্যাফেইন গ্রহণে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।গবেষণায় প্রমাণিত, ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ এসময় শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। তাই এ বিষয়গুলির দিকে সতর্ক থাকতে হবে।

এছাড়া এসময় চলাফেরায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। গর্ভাবস্থার প্রথম ৩ মাস অধিক ঝাঁকুনি হয় এমন দূরের জায়গায় ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অতিরিক্ত ভার উত্তোলন করা বা ভারী কোনো কাজ করা যাবে না। দুঃশ্চিতা, উদাসীনতা, কাজের চাপ এগুলো কোনোভাবেই করা যাবে না। পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে ঢিলেঢালা আরামদায়ক সুতি কাপড় বাছাই করতে হবে। অতিরিক্ত ক্যামিকেলযুক্ত প্রসাধনী এড়িয়ে চলতে হবে। নিয়মিত ত্বকের যত্ন নিতে হবে। কোনোভাবেই ত্বকে কোনো আঁচড় বা দাগ যেনো না লাগে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।

একজন গর্ভবতীর নয় মাসের আত্মত্যাগ, হাজারো শারীরিক যন্ত্রণা এবং কষ্টভোগই তাকে একজন পরিপূর্ণ নারী তথা মা করে তুলেন। সামান্য একটু সচেতনতা আর সতর্কতা এই পথকে করে তুলতে পারে আরো সহজ আর নিরাপদ।

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.